তাহমিদ ছোটবেলায় ছিল একদম অন্যরকম। তার
হাসিখুশি স্বভাব, সবার সাথে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা তাকে সবাই থেকে আলাদা করেছিল।
স্কুলের মাঠে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলে দিন কাটতো, আড্ডার ঝড়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত কখন
সময় চলে যেত টেরই পাওয়া যেত না। তবে জীবনের পথে একসময় সেই হাসিখুশি তাহমিদ হারিয়ে
গেল।
সময়ের স্রোতে সে আজ একা হয়ে গেছে।
বাবা-মা অনেক আগেই চলে গেছেন। বন্ধুরা এখন যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত। শহরের
ব্যস্ততা, চাকরির চাপে সবকিছুতেই সে একসময় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিল। এখন, যখন একটু
অবসর পেয়েছে, তখন দেখলো তার জীবনে আর কিছুই নেই। বড় ফ্ল্যাটের চার দেওয়াল আর
নিঃসঙ্গতার প্রাচীর তার একমাত্র সঙ্গী।
একটা সময় ছিল যখন তাহমিদ নিজেকে ভরসা
করতো। এখন সেই ভরসাটাও কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। দিনের পর দিন সে ঘরে বসে থাকে,
টিভির পর্দায় চোখ রাখলেও সেখানে কিছুই দেখে না। চারপাশে শব্দ থাকলেও তাহমিদের মনে
যেন এক নিঃশব্দ কোলাহল। একাকিত্ব তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে, সে যেন নিজেই নিজের
ভেতর হারিয়ে যাচ্ছে।
বেশ কয়েকদিন ধরে তাহমিদের শরীর ভালো নেই।
কোনো রকমে চা বানিয়ে খেতে গিয়ে চায়ের কাপ হাত থেকে পড়ে যায়। শূন্য চোখে সে চায়ের
কাপে তাকিয়ে থাকে, যেন তার নিজের জীবনটাও ঠিক এই চায়ের কাপের মতো—ভেঙে
গেছে, আর জোড়া লাগার সম্ভাবনা নেই।
এক সন্ধ্যায় তাহমিদ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে
ছিল। বাইরের রাস্তা আলোতে ঝলমল করছে, লোকজনের কোলাহল, গাড়ির হর্ন, সবকিছু চলছে
নিজের নিয়মে। কিন্তু তাহমিদের জীবনে কোনো আলো নেই। হঠাৎ তার মনে হলো, এই পৃথিবীতে
সে যেন একদম অপ্রয়োজনীয়। ক’জনই বা তার খোঁজ নেয়? কে তার একাকিত্বের কথা জানে?
তাহমিদ ফিসফিসিয়ে বলে, “মানুষের জীবনে এত একাকিত্ব কেন? এত কষ্ট
কেন?” তার গলা কাঁপে, চোখে অশ্রু জমে ওঠে। “আমার মতো কেউ কি আছে? কেউ কি
একাকিত্বে এতটা হারিয়ে গেছে?”
এরপর, তার ফোনের স্ক্রিনে একটিমাত্র
নোটিফিকেশন আসে। পুরনো এক বন্ধু মেসেজ করেছে, অনেকদিন পর খোঁজ নিয়েছে। তাহমিদের
চোখ ভিজে যায়। তার বুকের ভেতর যেন কোনো এক শূন্যতা একটু একটু করে পূর্ণ হতে থাকে।
সে বুঝতে পারে, একাকিত্বে হারিয়ে গেলেও, কেউ না কেউ হয়তো আছে, যে তাকে মনে রাখে।
"একাকিত্ব আমাদের জীবনের এমন এক সঙ্গী, যা কখনো আমাদের ছেড়ে যায় না। আমরা যতই
চিৎকার করি, সেটা কোনো কানে পৌঁছায় না। তবে কখনো কখনো, একটিমাত্র ভালোবাসার কথা,
আমাদের ভাঙা হৃদয় জোড়া লাগাতে পারে।"
গল্পের মূল বার্তা হলো একাকিত্ব জীবনের
একটি কঠিন বাস্তবতা, কিন্তু একটি সাধারণ সহানুভূতির কথাও সেই একাকিত্ব থেকে মুক্তি
দিতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন