অপ্রকাশিত অনুভূতি
লেখকঃ মুহাম্মদ সালেহ
তৃষা ও অরুণ একে অপরকে
ছোটবেলা থেকেই চিনত। একই পাড়ায় বড় হওয়া,
একই স্কুল, একই খেলার মাঠ তাদের জীবনের প্রতিটি ধাপে যেন এক অদৃশ্য বাঁধন
ছিল। তৃষা সবসময়ই অরুণকে বন্ধু হিসেবেই দেখেছে, কিন্তু অরুণের মনের গোপন কোণে অনেক দিন থেকেই ছিল
অন্য এক অনুভূতি
ভালবাসা।
অরুণ কখনও তৃষাকে কিছু বলতে
পারেনি। তৃষার প্রতি তার ভালবাসা এতটাই গভীর ছিল যে সে ভয় পেত, যদি বলার পর তাদের বন্ধুত্বে
কোনো ছেদ পড়ে। তৃষার হাসি, তার কষ্ট, তার প্রতিটি ছোট ছোট ইচ্ছা সবকিছুই অরুণের মন ছুঁয়ে যেত, কিন্তু সে শুধু নীরবে তাকিয়ে
থাকত।
তৃষা ছিল স্বপ্নময়, হাসিখুশি একটা মেয়ে। তার
জীবনের গল্পে ছিল রঙিন পাতা, নতুন নতুন সম্ভাবনা। সে কখনও
অরুণের মনের গভীরের সেই অপ্রকাশিত অনুভূতিকে বুঝতে পারেনি। অরুণও চেষ্টা করেনি তার
মনের কথা তৃষাকে জানাতে।
কিন্তু একদিন তৃষা অরুণকে
জানাল, সে দেশের
বাইরে পড়তে যাবে। অরুণের হৃদয়ে যেন ঝড় বয়ে গেল। তার মনে হলো, এই মুহূর্তে যদি সে কিছু না বলে, তবে হয়তো আর
কোনোদিন বলতে পারবে না। কিন্তু তৃষার উচ্ছ্বাস আর স্বপ্নের মাঝে তার মনের কথা বলার
সাহস পেল না অরুণ। সে শুধু হাসিমুখে বলল, "তুই ভাল
থাকিস, তৃষা। তুই যা চাইছিস, তা
যেন সব পাস।"
তৃষা চলে গেল বিদেশে পড়তে।
সময় বয়ে চলল, তৃষার
জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হলো। দূরত্ব তাদের মধ্যে যোগাযোগের ফাঁক তৈরি করল। অরুণ
বুঝতে পারল, তার সেই অপ্রকাশিত অনুভূতির জন্য আজীবন তাকে
একা থাকতে হবে।
একদিন তৃষা দেশে ফিরল, কিন্তু সে তখন অন্য কারও সঙ্গে
জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে প্রস্তুত। অরুণ তাদের জন্য শুভকামনা জানাল। তৃষার
চোখে আনন্দ আর ভালোবাসার ঝিলিক দেখে অরুণের মনে হল, সে যা
করতে পারেনি, সেটাই তৃষার জীবনের আনন্দের কারণ হয়ে
দাঁড়িয়েছে।
অরুণের মনের সেই অনুভূতি, যে অনুভূতি সে এতদিন ধরে নিজের
ভেতর লুকিয়ে রেখেছিল, তা আজও অপ্রকাশিত রয়ে গেল। তৃষার
জীবনের পথে সে এক নিঃশব্দ পথিক হয়ে থেকে গেল, আর তার
হৃদয়ের সেই অপ্রকাশিত ভালবাসা ধীরে ধীরে অতীতের পাতায় মিশে গেল।
অরুণ জানে, সে হয়তো তৃষাকে তার মনের কথা
কোনোদিনও বলতে পারবে না। কিন্তু তার এই অপ্রকাশিত অনুভূতিই তার জীবনের একমাত্র
সত্যি, যা সে নীরবেই বয়ে বেড়াবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন