হঠাৎ হারিয়ে যাবো
লেখকঃ মুহাম্মদ সালেহ
অনেক দিন হলো, রাতের নিস্তব্ধতায় মন
হারিয়ে যায় অতীতের স্মৃতিগুলোতে। রূপা, ছোটবেলা থেকে এমনই ছিল, আবেগপ্রবণ এবং
স্বপ্নময়। সবকিছুতেই যেন এক অন্যরকম রঙ খুঁজে পেত। ক্লাসে সবাই মিলে যখন খেলাধুলায়
মেতে উঠতো, রূপা তখন বসে থাকতো মাঠের এক কোনে, আকাশের দিকে তাকিয়ে। ওর কাছে সবকিছু
যেন এক অন্যরকম অনুভূতি জাগাতো।
জীবনের প্রতিটি দিনকে রঙিন মনে করতো
রূপা। তবে ওর এই জীবনটা হঠাৎই পাল্টে গেলো, যখন ওর বাবা হঠাৎই দূরারোগ্য ব্যাধিতে
আক্রান্ত হলো। বাবা ছিল ওর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। বাবার হাসি, ওকে নিয়ে সাইকেল
চালানো, গল্প বলা সবকিছু যেন এক মুহূর্তে থেমে গেলো।
বাবার মৃত্যুর পর রূপার মনে হলো, ওর ভেতর
থেকে কোনো কিছু হারিয়ে গেছে। বন্ধুরা সবাই পাশে ছিল, কিন্তু রূপা নিজেকে সবার থেকে
আলাদা করে ফেললো। মনে হতো যেন, সবকিছুই অর্থহীন হয়ে গেছে। প্রতিদিনের হাসি-মজার
ভেতরেও একটা শুন্যতা ওকে গ্রাস করতো।
একদিন হঠাৎ করেই, রূপা সিদ্ধান্ত নিলো যে
ও হারিয়ে যাবে। কেউ যেন জানতে না পারে কোথায় গেলো, কী করছে। ওর চেনা জায়গাগুলো
থেকে দূরে, একাকী কোনো এক শহরে গিয়ে নিজের মতো করে বাঁচবে। কোনো পরিকল্পনা ছিল না,
শুধুই পালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে।
অচেনা শহরে পৌঁছে রূপা নতুনভাবে জীবন
শুরু করলো। এখানেও কিছু মানুষ ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চেয়েছিল, কিন্তু ও তাদের কাছ
থেকে দূরে থাকতো। নিজের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া একটা ভালো লাগা ছিল ওর। একা থাকার মাঝে
একধরনের মুক্তি খুঁজে পেত।
কিন্তু একদিন, এক অন্ধকার রাতে, আকাশের
দিকে তাকিয়ে রূপা বুঝলো, ও যেখানেই যাক না কেন, ওর ভেতরের শুন্যতাটা কখনও পূর্ণ
হবে না। কিছু হারিয়ে যাওয়ার ব্যথা, ভালোবাসার অভাব, আর প্রিয়জনের স্মৃতি ওকে আজীবন
তাড়া করে বেড়াবে।
রূপা হয়তো হারিয়ে গেছে চেনা মানুষের কাছ
থেকে, কিন্তু নিজের মন থেকে পালিয়ে যেতে পারেনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন