পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪

মায়ের চোখের জল....



  মায়ের চোখের জল

লেখকঃ মুহাম্মদ সালেহ

 

রাতের অন্ধকারে ঘরের কোণে বসে কাঁদছিল রমলা। তার একমাত্র ছেলে অর্ণব গতকাল রাতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে, আর ফিরে আসেনি। অর্ণবের বয়স মাত্র ২২, কিন্তু মায়ের চোখের মণি। একমাত্র ছেলেকে ঘিরেই তার সব স্বপ্ন ছিল। ছোটবেলা থেকেই অর্ণব ছিল খুব চঞ্চল, কিন্তু পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী ছিল না। রমলা ভেবেছিল, সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।

কিন্তু কলেজে ওঠার পর অর্ণবের জীবন বদলে গেল। খারাপ সঙ্গ, নেশার জগৎ, আর রাত জাগার অভ্যাসে জড়িয়ে পড়েছিল সে। রমলা অনেকবার বুঝিয়েছে, বোঝানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছিল না। ছেলেকে নিয়ে তার অগাধ মায়া, কিন্তু একই সঙ্গে ভয়ের অন্ধকারও গ্রাস করছিল।

অর্ণবের বন্ধুরা সবসময়ই ছিল নেশা, মদ, আর মাদকদ্রব্যের সাথে জড়িত। একদিন হঠাৎ করেই রমলা জানতে পারল, অর্ণব পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য রাখার অভিযোগ। সেই মুহূর্তে রমলার পৃথিবী যেন থেমে গেল। আদালতে ছেলেকে নিয়ে যাওয়ার দিন তার চোখের জল বাঁধ মানল না। কিন্তু অর্ণব সেদিন মায়ের দিকে একবারও ফিরে তাকায়নি।

কয়েক মাস পর, একদিন হঠাৎ অর্ণব ফিরে এলো। সে ছিল মলিন, ক্লান্ত আর বিধ্বস্ত। রমলা কিছু না বলে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিল। অর্ণব কিছুক্ষণ নিশ্চুপ ছিল, তারপর মায়ের চোখের জল দেখে বলল, "মা, আমি সব বুঝেছি। আমি তোমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছি, কিন্তু এবার আমি সত্যি বদলাতে চাই।"

রমলার চোখে আনন্দের অশ্রু জড়িয়ে এলো। সে জানত না অর্ণব সত্যিই বদলাবে কি না, কিন্তু এই কথাগুলো তার মনের মধ্যে এক নতুন আশার আলো জ্বালিয়ে দিল। সে তার ছেলেকে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিল।

অর্ণব সত্যিই বদলানোর চেষ্টা করছিল। সে তার পুরোনো জীবন ছেড়ে দিতে শুরু করল, ধীরে ধীরে মাদক থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছিল। রমলা তার পাশে ছিল সবসময়, তার মায়ের ভালোবাসা আর মনের জোরই ছিল অর্ণবের মূল শক্তি।

কিন্তু হঠাৎ একদিন অর্ণব আবারও পুরোনো সঙ্গের কাছে ফিরে গেল। সে আর পেরে উঠছিল না। রমলার হৃদয়টা ভেঙে গিয়েছিল সেই মুহূর্তে। তার চোখের জল যেন শুকিয়ে গিয়েছিল, শুধু নিঃশব্দে তার বুকের ভেতর কান্না জমে ছিল।

এরপর একদিন, ভোরবেলা রমলার ফোন বেজে উঠল। অর্ণব আর নেই – নেশার অতিরিক্ত মাত্রায় তার জীবন শেষ হয়ে গেছে। রমলার মনে হলো, তার জীবনের শেষ আশাটুকুও হারিয়ে গেল।

অর্ণবের শবযাত্রার সময়, রমলার চোখে আর কোনো অশ্রু ছিল না। তার চোখের জল সব শেষ হয়ে গিয়েছিল আগেই। কিন্তু হৃদয়ের গভীরে এক অদৃশ্য কান্না ছিল, যা কোনোদিনই থামবে না। এই কান্না সেই মায়ের, যে তার সন্তানের জন্য জীবন দিয়ে ভালোবাসা, আর শেষ পর্যন্ত সেই ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে হারানোর বেদনা পেয়েছিল।

"মায়ের চোখের জল" শুধু অর্ণবের গল্প নয়, বরং প্রতিটি সেই মায়ের গল্প, যারা নিজেদের সন্তানদের ভুলের ভার বয়ে বেড়ায়, আর তাদের চোখের জল হয়ে যায় অন্তহীন বেদনার প্রতীক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

অনিশ্চিত জীবনের সব কিছুই যেন এক ধোঁয়াশা

অনিশ্চিত জীবনের সব কিছুই যেন এক ধোঁয়াশা। স্বপ্ন দেখি, ভালোবাসি, হারাই, আবার উঠে দাঁড়াই। তবু শেষে যখন একলা হয়ে যাই, তখন বুঝি সব আয়োজনই ছিল ...