বেকারের বৃত্তান্ত
লেখকঃ
মুহাম্মদ সালেহ
রাহুলের জীবনটা যেন থমকে আছে। চারপাশের
সবাই তাকে নিয়ে কথা বলে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন। তারা কেউ কেউ করুণা
করে, আবার কেউ বিদ্রুপ করে। "ছেলেটা
এখনো কিছু করতে পারল না!" এই কথাটা শুনতে শুনতে রাহুলের মনের ভিতরটা যেন শূন্য হয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো রেজাল্ট নিয়ে
বের হলেও চাকরি জোটেনি। প্রতিদিন নতুন নতুন চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন করে,
ইন্টারভিউ দেয়, কিন্তু কোথাও যেন কপাল খুলছে না। রাহুলের বাবা-মা শুরুতে তাকে অনেক
সান্ত্বনা দিতেন, কিন্তু তাদের ধৈর্যের বাঁধও ভেঙে গেছে। এখন তার বাবার মুখে
হতাশার ছাপ স্পষ্ট। মা শুধু নীরবে তাকিয়ে থাকেন। কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারেন না,
কারণ তার চোখের জল অনেক কিছুই বলে দেয়।
বেকার জীবনের দিনগুলো দীর্ঘ। সময়ের মূল্য
যেন দিনকে দিন কমে আসছে। রাহুল তার পুরোনো বন্ধুদের সাথে তেমন যোগাযোগ রাখে না।
কারণ, তারা কেউ এখনো বেকার নেই। কেউ ব্যবসা শুরু করেছে, কেউ বড় চাকরিতে ঢুকেছে।
রাহুলের মনে হয়, সে যেন সবাই থেকে পিছিয়ে পড়েছে।
রাতে ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে রাহুল
ভাবতে থাকে এই জীবনটা কি শুধু অপেক্ষার? কোথায় তার সেই
স্বপ্ন, যেগুলো নিয়ে একসময় সে ভবিষ্যতের ছবি আঁকত? তার মনে হয়, সমাজ তাকে চাপে
ফেলে দিচ্ছে, কিন্তু সে সেই চাপ থেকে বের হতে পারছে না।
একদিন রাহুলের পুরোনো এক বন্ধু অমিত হঠাৎ
দেখা করতে আসে। অমিত এখন সফল উদ্যোক্তা। ছোট ব্যবসা শুরু করে আজ সে একটা বড়
প্রতিষ্ঠানের মালিক। রাহুলের সাথে আড্ডার এক পর্যায়ে অমিত বলে, "দোস্ত,
বেকারত্ব মানেই তো শেষ না। আমি তো কোনো চাকরি পাইনি, তাই নিজেই একটা কিছু শুরু
করেছি। ছোট হলেও চেষ্টা কর।"
অমিতের কথা রাহুলের মনে দাগ কাটে। তার
ভিতরটা কাঁপতে থাকে সে কি পারে না নিজের জন্য কিছু করতে? হোক সেটা ছোট, তবুও একটা
কিছু।
রাহুল রাতের অন্ধকারে নিজেকে নতুন করে
খুঁজে পায়। সে ঠিক করে, আর বসে থাকবে না। একটা ছোট উদ্যোগ নিয়েই শুরু করবে। হয়তো
প্রথমে সফল হবে না, কিন্তু চেষ্টা করতে হবে।
সে একটা ডায়েরি খুলে লক্ষ্য ঠিক করে—কী
কী করতে হবে, কীভাবে শুরু করতে হবে। পরিবারকে জানালে শুরুতে তারা অবাক হয়, কিন্তু
পরে সমর্থন দেয়। রাহুল জানে, সমাজের কাছে সে হয়তো আজ বেকার, কিন্তু সে নিজের কাছে
একজন লড়াই করা যোদ্ধা।
"বেকারত্ব" আসলে কোনো অভিশাপ নয়, এটা হতে পারে নতুন কিছু
শুরু করার সুযোগ। রাহুল সেই সুযোগটা নিয়েই নতুন পথে পা বাড়ায় নিজেকে আবার খুঁজে
পাওয়ার পথে।

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন